চাকমা সাহিত্যে আদি কবি ও সাধক শিবচরণ চাকমা

চাকমা সাহিত্যের আদি কবি শিবচরণ চাকমা “সাধু শিবচরণ” নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ “গোজেন লামা” চাকমা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপি। গোজেন লামার পান্ডুলিপিগুলো চাকমা বর্ণে লিখিত অবস্থায় পাওয়া যায়। গোজেন লামায় মোট ৭ টি লামা ছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

শিবচরণের জন্ম বর্তমান রাজস্থলী থানার বাজারের নিকটবর্তী ঙারাওয়াহ নামক গ্রামে। তাঁর জন্মকাল সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও বাংলা ১১৮৪ এবং ইংরেজি ১৭৪০-৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বলে অনুমান করা যায়। শিবচরণ তাঁর পিতা-মাতার দ্বিতীয় সন্তান। তাঁর পিতার নাম ধুংগি এবং মাতার নাম ধর্মপুদি/ধর্মবী। শৈশবেই শিবচরণ পিতৃহারা হন। সেসময় তাঁর বড়ভাই কালীচরন পরিবারের গুরুদায়িত্ব নেন। শিবচরণের বিদ্যাশিক্ষার হাতেখড়ি হয় তাঁর মাতুল সম্পর্কীয় হরমণির কাছে। শিবচরণ বাল্যকাল থেকেই ভাবুক প্রকৃতির ছিলেন। এককালে শুল্ক প্রদানের বিষয়ে বিরোধের জের ধরে তৎকালীন ব্রিটিশদের সঙ্গে চাকমা রাজা শুকদেব রায় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে শুকদেব রায়ের সেনাপতি রুনু খাঁর সাথে ব্রিটিশদের সাথে বেশ কয়েকবার যুদ্ধ হয়। তখন চাকমারা শিলক নদীর তীর পরিত্যাগ করে বাপ দাদার বাস্তুভিটা ছেড়ে মাতামুহুরি নদীর তৈনছড়ির তীরে চলে যেতে বাধ্য হয়। সেই সাথে শিবচরণের পরিবারও তৈনছড়ির তীরে চলে আসেন। তৈনছড়িতে এসে তাঁর ভাবশিষ্য চিত্তঙ্যা ওরফে চিদংকে সঙ্গী হিসাবে পান।এতে তাঁর সাধনা আরও বেড়ে যায়। চিদং শিবচরণের সাথে শেষ যাত্রায় ছিলেন। জনশ্রুতি অনুসারে, শিবচরণ আকাশ পথে অন্তর্হিত হন। একসময় যখন শিবচরণকে আর দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন চিদং সব ঘটনা প্রকাশ করেছিল।

শিবচরণ সম্পর্কে চাকমা সমাজে বহু জনশ্রুতি আছে।জনশ্রুতি অনুসারে, বালক শিবচরণ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে  ২/৩ দিন পরে হঠাৎ দেখা দিতেন। শুকনো কাপড় পরিধান অবস্থায় পায়ে হেঁটে নদী পার হয়ে যেতেন। তাঁর বালক বন্ধুর চোখ বন্ধ করে হঠাৎ একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যেতেন। খাবারের সময় মাতা পুত্রকে না পেয়ে তাঁর নিমিত্ত “ভাতমোচা” ফুল বারেঙের(বাঁশের বেত দিয়ে তৈরি একধরনের ঝুড়ি, যা চাকমাদের বিবাহ অনুষ্ঠানে ব্যবহার হয়)  মধ্যে রেখে দিতেন।আশ্চর্যের কথা ২/৩ মাস পরে শিবচরণ বাড়িতে আসলেও নাকি সেই ভাত গরম পাওয়া যেত।

তথ্যসূত্র: ১। আলোর পথ দেখালো যারা- প্রমোদ বিকাশ কার্বারী ২। চাকমা কবি ও সাধক শিবচরণ চাকমা- জুমজার্নাল

 280 total views,  2 views today

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *