জুম্মো বাজ: জুমচাষীদের ঐতিহ্যর প্রতীক
Bhubon Chakma
জুম্মো বাজ জুমে চাষ করা হয় বলে জুম্মো বাজ নামে পরিচিত। যা চাকমা ভাষার একটি নাম। এটি দেখতে অনেকটা লাউয়ের মতো হলেও এটি লাউয়ের একটি জাত মাত্র । লাউ উৎপাদন করতে যেমন বীজ রোপন করতে হয়, তেমনি এটি উৎপাদন করতেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
বয়স্ক ব্যক্তিদের তথ্য মতে, জুম্মো বাজ তিন প্রকারের হয়।১. তিদে বাজ ( তিতা বাজ)২. মিদে বাজ ( মিষ্টি বাজ)৩. সর বাজ
ছোট্ট অবস্থায় মিষ্টি বাজকে লাউয়ের মত করে রান্না করে খাওয়া গেলেও বাকী “তিদে বাজ” কিংবা “সর বাজ” খাওয়া যায় না।
যে ভাবে তৈরি হয়: বীজ বপনের পরবর্তী সময়ে যখন ফলটি পরিপক্ক হয়, বাজ বানানোর জন্য ফলটির গলার উপরের অংশ গোলাকার করে কাটা হয় এবং ভিতরের অংশ পঁচিয়ে খোলস তৈরি করা হয়। তারপর পঁচার দুর্গন্ধ সাড়াতে কয়েকদিন পরিষ্কার পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। এটিকে বহুদিন ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য ঘরের চুলার উপর টাঙিয়ে রাখা হয়। ফলে চুলার আগুনের ধোঁয়ায় বাজটি আরো শক্ত হয়।এভাবে বাজকে ব্যবহার উপযোগী করা হয়।
জুম্মো বাজের ব্যবহার: মূলত জুম চাষীরা এটি ব্যবহার করে থাকে। মিষ্টি বাজে করে পানি পান করা হয়। স্বাভাবিক পানির স্বাদের তুলনায় এর ভিতরের পানির স্বাদ মিষ্টি হয়। জুম চাষীরা এটিকে পানির কলসির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকে । ছড়া বা কুয়া থেকে এটির মাধ্যমে পানি তুলে জুমঘরে নিয়ে যাওয়া হয় ।পানি ঠান্ডা থাকে এবং ব্যবহারে সুবিধা বলে জুম চাষীরা তাদের ব্যবহারের জন্য এটি উৎপাদন করে থাকে । এছাড়াও এটিকে পানির কুয়া থেকে পানি তোলার জন্য ব্যবহার করা হয় যা বর্তমানে জগের বিকল্প। শুকনা খাবারও এটির ভিতর সংরক্ষণ করে রাখা হয়। অন্যদিকে তিদে বাজের তেমন ব্যবহার হতো না আর সর বাজের স্বল্প পরিসরে ব্যবহার ছিলো। সর বাজ বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে ব্যবহার হতো। কেননা সর বাজ আকারে ছোট হয়। ভিতরের অংশ পচিয়ে খোলস তৈরি করার পর, বাজটির ভিতর বীজগুলো রেখে ঝাঁকানি দিলে ঝনঝন শব্দ হয়, যেমনটি বর্তমানে ঝুনঝুনির মতো শব্দ করে। এটি দিয়ে বাচ্চার খেলা করতো। মিষ্টি বাজের তুলনায় এগুলো কম ব্যবহার হতো তাই কমও উৎপাদন হতো।
জুম্মো বাজকে জুম চাষীদের ঐতিহ্যর প্রতীক। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম চাষীদের মধ্যে এটি পরিচিত। চাকমা জনগোষ্ঠী তাদের ভাষায় এটিকে “বাজ” বলে, মুরং(ম্রো) জনগোষ্ঠী” তুইয়িয়া” বলে, বম জনগোষ্ঠী “তুঃওম” বলে থাকে অর্থাৎ প্রত্যেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব মাতৃভাষায় এটির আলাদা আলাদা নাম রয়েছে । উল্লেখ্য ছবিটি মিষ্টি বাজের এবং বান্দরবান থেকে সংগৃহীত।
385 total views, 2 views today
আজকাল এ আমাদের জুম্ম প্রতীক নিখুঁত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গরমকাল ও রোদ্দুর দিনে এ তুইয়িয়া ( আমাদের ম্রো ভাষায়) ভেতরের পানি শুষ্ক বজায় রাখতে সক্ষমতা রক্ষা করে। জুম্ম প্রতীক এ তুইয়িয়া এখন তরুণ– তরুণীর কাছে শব্দটুকু নাই। সমাজও এমন একটা জিনিসকে আর ধরে রাখতে চায়না। কেননা আজকাল তো পানীয় বোটল একবার ক্রয় করে নিলে অতি দ্রুততর সহজলভ্য ও সস্তায় পাওয়া যায় তার থেকে সুবিধা দীর্ঘকাল সমেত ব্যবহার করা যায়।